ওষুধের দোকানে মোবাইল কোর্ট । এবার অভিযানের আগেই দোকান বন্ধ!

নগরীতে এবার অভিযানের আগেই দোকান বন্ধ করে পালালো ওষুধ দোকানিরা। দোকান বন্ধ থাকায় অভিযানও পরিচালনা করা যায়নি। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত  ঘুরে মাত্র তিনটি দোকানে অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল রোববার নগরীর চট্টেশ্বরী সড়ক, চকবাজার, জামালখান ও আসকারদিঘীর পাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আরডিসি রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি দল নকল-ভেজাল ও অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রির বিরুদ্ধে গতকালও অভিযানে নামে। প্রথমেই চট্টেশ্বরী সড়কের কয়েকটি দোকানে অভিযান পরিচালনা করে দলটি। এতে তিনটি দোকানকে মোট ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি জব্দ করা হয় প্রায় দেড় লাখ টাকার ফিজিসিয়ান স্যা¤পল ওষুধ ও ফুড সাপ্লিমেন্ট। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দলটি চট্টেশ্বরী সড়কে থাকতেই চারদিকে খবর চাউর হয়ে যায়। এর প্রমাণ পাওয়া যায় সেখান থেকে বড়জোর একশ মিটার দূরত্বের চকবাজার মোড়ে গিয়ে। যাওয়ার আগেই ওষুধের সব দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায় চকবাজার এলাকার দোকানিরা। একটি দোকানও খোলা না পাওয়ায় সেখান থেকে অভিযান পরিচালনা না করেই ফেরত যেতে হয় মোবাইল কোর্টকে। চকবাজার থেকে জামাল খান এলাকায় এসেও একই চিত্র পাওয়া যায়। ততক্ষণে জামাল খান এলাকার সবকয়টি দোকানও বন্ধ করে পালিয়ে গেছে দোকানিরা। ফলে সেখানেও নিস্ফল অভিযান। পরে জামালখান থেকে পার্শ্ববর্তী আসকার দিঘী এলাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের দলটি। কিন্তু সেখানেও একই চিত্র। পৌঁছার আগেই ওষুধের সব দোকান বন্ধ! সেখানেও আর অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে সেখান থেকে ফিরে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিনের নেতৃত্বে থাকা ভ্রাম্যমাণ আদালতের দলটি। এ প্রসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন বলেন, প্রথমে চট্টেশ্বরী সড়কের একটি দোকানে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। ওই সময় সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যদের পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দোকানের সামনে প্রহরায় থাকতে বলি। যাতে দোকানগুলো বন্ধ করে পালিয়ে যেতে না পারে। কিন্তু আমাদের সাথে পুলিশ সদস্য বেশি সংখ্যক ছিলনা। যার ফলে পুলিশ প্রহরায় থাকা দুটি ছাড়া বাকি সব দোকান নিমিষেই বন্ধ করে দোকানিরা পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, প্রথমে জান্নাত ফার্মেসি নামের একটি দোকানে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। এসময় তার বিপরীত দিকে থাকা দুটি দোকানও বন্ধ করে দোকানিরা সটকে পড়ে। পরে সেখান থেকে চকবাজার মোড়ে গিয়ে সব দোকান বন্ধ দেখতে পাই। একই ভাবে জামালখান ও আসকারদিঘী এলাকায়ও। দোকান খোলা না পাওয়ায় আর অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। অভিযানের আগেই সব দোকান বন্ধের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন বলেন, ওষুধ দোকানিরা এখন সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। আমরা একটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করলে বাকি সব এলাকায় খবরটি চলে যাচ্ছে। দোকানিরা এ খবর একজন অপরজনকে জানিয়ে দিচ্ছে। আর মোবাইল কোর্ট পৌঁছার আগেই সবাই দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাচ্ছে। তবে এরপরও অভিযান অব্যাহত থাকবে, বন্ধ হবেনা বলে মন্তব্য করেন এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এদিকে, চট্টেশ্বরী এলাকায় অভিযানে ফুড সাপ্লিমেন্ট, ফিজিশিয়ান স্যা¤পল ও অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি এবং লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করার দায়ে মেসার্স জান্নাত ফার্মেসিকে ২০ হাজার টাকা, মেসার্স রাজু মেডিসিনকে ৫ হাজার টাকা ও মেসার্স লিন্নাস ফার্মেসিকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পরিচালিত মোবাইল কোর্টের প্রায় প্রতিটি অভিযানেই খবর পেয়ে দোকান বন্ধ করে সটকে পড়ছে ওষুধ দোকানিরা। একটি দোকানে অভিযান পরিচালনাকালীন আশ-পাশের সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার সব দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাচ্ছে তারা। গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল এলাকায় মোবাইল কোর্ট দেখে ওষুধ নালায় ফেলেও পালিয়ে যায় দোকানিরা।

0 Comments

There are no comments yet

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − six =

Back to top