খাদ্যে ভেজাল : স্বাস্থ্যঝুঁকিতে দেশ

খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রবণতা ইদানীং ভয়ঙ্কর ও বহুমাত্রিক। নকল ও ভেজালের অশুভ দাপটে খাঁটি ও বিশুদ্ধ শব্দ দু’টিই এ দেশ থেকে নির্বাসনের পথে। ভেজালমুক্ত খাদ্যসামগ্রী এখন আমাদের দেশে দুর্লভ।

Chuadanga-120160119033319

বাংলাদেশের শতকরা ৪০ ভাগ খাদ্যপণ্যই ভেজাল। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা দেশের সর্বাধুনিক খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারের পরীক্ষায় এ আতঙ্কজনক তথ্যটি উদ্ঘাটিত হয়েছে। এমনকি মসলাপণ্যও ভেজালমুক্ত নয়।
এক দিকে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যসামগ্রী এবং ওষুধে খাঁটি ও ‘বিশুদ্ধ’ লেভেল লাগিয়ে আর অপর দিকে মাছ, গোশত, ফলফলাদি ও শাকসবজিতে মানবজীবন ধ্বংসকারী ফরমালিনজাতীয় বিষাক্ত দ্রব্যসহ নানা রকম বিষাক্ত ওষুধ মিশিয়ে প্রতিনিয়ত বিক্রি করছে রাজধানীসহ দেশের সব বিপণিবিতানে।
সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা কদাচিৎ দু-চারটা দোকানে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করলেও পরে হাত গুটিয়ে নেয়, ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়। বিপণিবিতানগুলো হয়ে যায় ভেজালের অভয়াশ্রম। দেশের বাজারগুলোতে বিষাক্ত ওষুধ মেশানো ছাড়া ফল এবং মাছ দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। গুরুপাপে লঘুশাস্তি তো কারোরই কাম্য হতে পারে না। আমাদের প্রত্যাশা, মাছ, গোশত ও ফলফলাদিসহ সব খাদ্যসামগ্রীর দোকানগুলোতেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনি ভেজালবিরোধী অভিযান জোরদার ও নিয়মিত করবে এবং অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সূত্র মতে, বাংলাদেশ মানয়িন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই মাত্র ১৫৫টি পণ্য বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষা করে। বাকি পণ্যগুলো বাধ্যতামূলক না হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা এগুলোতে ভেজাল মেশাচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১০ জন স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের পদ আছে, কিন্তু বর্তমানে দু’টি পদ খালি। এ ছাড়া নমুনা সংগ্রহকারীরাও নিয়মিত নন। সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সংখ্যাও অপর্যাপ্ত। দক্ষিণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য আছেন মাত্র তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযান পরিচালনার সময় প্রায়ই পুলিশের সঙ্কট দেখা দেয়। এমনিতেই দুর্বল আইনি প্রক্রিয়ায় মানহীন কিংবা ভেজাল পণ্য উৎপাদকদের শাস্তি খুব একটা হয় না। এ ছাড়া পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতার অভাব আছে।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরিতে পাঠানো ৪৩টি খাদ্যপণ্যের পাঁচ হাজার ৩৯৬টি নমুনা পরীক্ষায় দুই হাজার ১৪৭টিতেই ভয়াবহ ভেজালের প্রমাণ পাওয়া গেছে। হলুদ, মরিচ, জিরার গুঁড়া ইত্যাদি মসলার নামে আমরা কী খাচ্ছি তা উদ্ঘাটিত হয়েছে ইতঃপূর্বে পরিচালিত বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর অনুসন্ধানে। মসলার সাথে কাপড়ের বিষাক্ত রঙ, দুর্গন্ধযুক্ত পটকা, মরিচের গুঁড়া, ধানের তুষ, ডাল ইত্যাদি মিশাচ্ছে। পণ্যের মান ঠিক আছে কি না তা দেখার দায়িত্ব বিএসটিআই’র। শহরাঞ্চলে তাদের কার্যক্রম সীমিত। গ্রামাঞ্চলে তা-ও নেই। ফলে গ্রামাঞ্চলে মসলার নামে যা বিক্রি হচ্ছে, এর প্রায় শতভাগ ভেজাল।
লেখক : উন্নয়নকর্মী

– See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/77401#sthash.MwcxCqRk.dpuf

0 Comments

There are no comments yet

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 1 =

Back to top