‘মাদক নিরাময়’ ভয়ংকর!

রাজধানীর অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে কথিত ‘মাদক নিরাময় কেন্দ্র’। চিকিৎসার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে মানবসেবার নামে গড়ে তোলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যেখানে থাকে না কোনো চিকিৎসক, দেয়া হয় না সঠিক চিকিৎসা। এমনকি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করুণ। এরপরও প্রভাবশালী ও সংশ্লিষ্টদের ছত্রছায়ায় দশকের পর দশক ধরে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে চক্রগুলো। অনেকে আবার নিরাময় কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়ে নিজেই খুলে বসেছেন মাদক নিরাময় কেন্দ্র। রোগীর অবস্থা না বুঝে শারীরিক নির্যাতন, বারবার গোসল করানো ও ঘুমের ওষুধই এখানে ‘চিকিৎসা’। আবার কোনো কোনোটির বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক বিক্রির অভিযোগও।

সম্প্রতি রাজধানীর আদাবরে ‘মাইন্ড এইড হাসপাতালের’ টর্চার সেলে নির্মমভাবে খুন হন এএসপি আনিসুল করিম শিপন। এরপর ভোরের কাগজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ‘হাদী মাদকতা হ্রাস কমপ্লেক্স’, ‘সোনার বাংলা সেন্টার (মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’), ‘নতুন জীবন মাদক নিরাময় কেন্দ্র’, ‘চাঁদের আলো মাদক নিরাময় কেন্দ্রসহ’ বেশ কয়েকটি অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের নাম। যারা বছরের পর বছর ধরে ভাড়া বাসায় কোনো ধরনের লাইসেন্স ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ছাড়াই রোগীদের ভর্তি করে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। শুধু এই চারটি প্রতিষ্ঠানই নয় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের শতাধিক অবৈধ মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে কড়াকড়ি ও নজরদারি শুরু হওয়ায় অনেকেই রোগী তাড়িয়ে সাময়িক বন্ধ রেখেছেন প্রতিষ্ঠান।

আলোচিত মাইন্ড এইড হাসপাতাল মাদক নিরাময় কেন্দ্র হিসেবে অনুমোদন নেয়ার পর প্রতারণা করলেও এ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওইটুকু অনুমোদনও নেই। এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার নামে অনেক ক্ষেত্রে মাইন্ড এইডের চেয়েও ভয়ংকর পন্থা অবলম্বন করে থাকে। এদিকে দালালের মাধ্যমে রোগী সংগ্রহ করে মনগড়া চিকিৎসা চলছে এসব ভুয়া নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে এ ধরনের কার্যক্রম চললেও যেন দেখার কেউ নেই। যদিও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) বলছে, তথ্য বা অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

৩ দশক ধরে চলছে লাইসেন্সহীন ‘হাদী নিরাময় কেন্দ্র’ : রাজধানীর দয়াগঞ্জ মোড় সংলগ্ন পশ্চিম যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত মদিনা মেডিকেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবেÑ এটি শুধুই হাসপাতাল। কিন্তু হাসপাতালের আড়ালে চলছে হাদী মাদকতা হ্রাস কমপ্লেক্স নামে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র। বাইরে কোনো ব্যানার না থাকায় বিষয়টি কারোই নজরে আসবে না। অথচ ভবনের ৯ তলায় পরিচালনা করা হচ্ছে নিরাময় কেন্দ্রটি। কিন্তু ১৯৯১ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু হওয়া নিরাময় কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ অবৈধ। নেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন। কোনো মাদক রোগীর মানসিক সমস্যা থাকলে ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে মানসিক বা মাদক চিকিৎসার জন্য প্রতিষ্ঠানটির কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ৩ জন মেয়েকে ডাক্তার সাজিয়ে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। বিনিময়ে প্রতি ১০ দিনে ৬

হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।
গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে মদিনা মেডিকেলে গেলে রিসিপশনিস্ট রুবেল চিকিৎসার ধরন তুলে ধরেন। প্রথমে ৩ জন চিকিৎসক আছে বলে জানান। পরে ওই চিকিৎসকদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে ভড়কে যান তিনি। এরপরই বলতে থাকেন আসল ঘটনা। রুবেল বলেন, ওই ৩ নারী ৯ বছর ধরে এখানে কর্মরত। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও কাজ করতে করতে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। কীভাবে চিকিৎসা দেয়া হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত মাদকের কোনো চিকিৎসা নেই। এখানে নিয়ম-কানুন মেনে চলা, ঘুমের ওষুধ দেয়া ও কয়েকবার গোসল করানো হয়। পরে ওয়ার্ডের পরিবেশ দেখতে চাইলে তিনি কেন্দ্রের ভেতরে যেতে দিতে রাজি হননি। এক পর্যায়ে কেন্দ্রের মধ্যে থাকা সিসি ক্যামেরার চলমান ফুটেজ দেখিয়ে বলেন, এখানে দেখে নেন। এখনো ১১ জন রোগী ভর্তি আছে।

ফুটেজে দেখা যায়, খুব কাছাকাছি বেড ফেলে ৪০ বেডের নিরাময় কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। ওই নিরাময় কেন্দ্রে থাকা সবাই এক জায়গায় গোল হয়ে বসে কিছু একটা করছেন। কেমন খরচ পড়বে জানতে চাইলে রুবেল বলেন, প্রতি ১০ দিনে ৬ হাজার টাকা। এভাবে যতদিন রোগী থাকবে ততদিন টাকা দিয়ে যেতে হবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতেই হাসপাতালের আড়ালে অভিনব পন্থায় মাদক নিরাময় কেন্দ্রটি পরিচালিত হচ্ছে। এ জন্য কোথাও নিরাময় কেন্দ্রের সাইনবোর্ড কিংবা ব্যানার ব্যবহার করা হয় না। আর রোগী আনার জন্য রয়েছে দালাল চক্র। বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগী এনে দিলে দালালদের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেয়া হয়।

লাইসেন্স ছাড়া নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আলহাজ রেজাউল করিম দুলাল মুঠোফোনে ভোরের কাগজকে বলেন, নিরাময় কেন্দ্রের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন আছে। নিরাময় কেন্দ্রের অনুমোদন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দিয়ে থাকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নয়Ñ জানালে তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরেরও অনুমোদন আছে। আমার কাছে তথ্য আছে আপনার নিরাময় কেন্দ্রের কোনো অনুমোদন নেইÑ বলার পরই উত্তেজিত হয়ে পড়েন রেজাউল করিম দুলাল। বলতে থাকেন, যা মন চায় করেন। আমার প্রতিষ্ঠান এভাবেই চলবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সব ম্যানেজ করে চলিÑ বলেই ফোনের লাইন কেটে দেন।

গোসলই একমাত্র চিকিৎসা ‘সোনার বাংলায়’ : রাজধানীর নতুন কদমতলীর শ্যামপুর বাজার সংলগ্ন গুলবাগের ৪৭ নম্বর বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে সোনার বাংলা সেন্টার (মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র)। ১০ বেডের এই কেন্দ্রেরও নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। কেন্দ্রটির দুই স্বত্বাধিকারী ফাহিম আহমেদ সজল ও মো. কামাল শেখ একসময় মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়ে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে গড়ে তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটি। কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকলেও নিজেদের যেভাবে চিকিৎসা দেয়া হতো সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রোগীদের শুধু বারবার গোসল করান তারা। মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পাশাপাশি একই অফিসে বসে ইট-বালু-খুয়ার ব্যবসাও করেন ফাহিম আহমেদ সজল।

গত সোমবার নিরাময় কেন্দ্রটিতে গিয়ে কোনো রোগী পাওয়া না গেলে সজল ও কামাল শেখ নিজেরাই জানালেন, এএসপি আনিসুলের মৃত্যুর পর সময়টা খারাপ যাচ্ছে। এ জন্য ভর্তি থাকা ৫ রোগীকে গত রবিবার অভিভাবক ডেকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আপাতত ফাঁকা রয়েছে ৩ বছর ধরে অবৈধভাবে পরিচালিত হওয়া নিরাময় কেন্দ্রটি।

১ বছর আগে নিরাময় কেন্দ্রটি থেকে চিকিৎসা নেয়া মো. জনি নামে এক যুবক ভোরের কাগজকে বলেন, ভর্তি হওয়ার পরে দিনে ২-৩ বার গোসল করানো হতো। চিকিৎসা দেয়ার জন্য কোনো চিকিৎসক তাকে দেখেনি। এমনকি থাকা-খাওয়া ও টয়লেটের অবস্থাও নাজুক। কেন্দ্রটির ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, ৩টি ঘিঞ্জি রুমে ১০টি বেড বসানো হয়েছে। চারদিকে আবদ্ধ হওয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসবে যে কারো। নামে মাত্র রাখা হয়েছে একটি চিকিৎসক কক্ষ। মাসে রোগীর সামর্থ্য বুঝে ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হতো বলে জানা গেছে।

লাইসেন্স ছাড়া কিভাবে চলছেন জানতে চাইলে নিরাময় কেন্দ্রটির চেয়ারম্যান ফাহিম আহমেদ সজল ভোরের কাগজকে বলেন, বারাকা মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে নিরাময় কেন্দ্র খোলার চিন্তা মাথায় আসে। আমরা শুনেছি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিতে অনেক টাকা লাগে। এ জন্য লাইসেন্স ছাড়াই শুধু মানবসেবার জন্য কার্যক্রম শুরু করি। এখন আমরা বুঝতে পেরেছি এই পরিবেশে লাইসেন্স পাব না। এ জন্য শ্যামপুর বাজারে নিয়ম মেনে নতুন অফিস করা হচ্ছে। সেখানে অফিসের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হবে।

বারবার গোসলের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক একসময় রাজধানীর আপন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নেয়া কামাল শেখ বলেন, নেশাগ্রস্তদের মাথা নেশা করতে না পারলে গরম থাকে। এ জন্য দিনে ২-৩ বার গোসল করানো হয়। মাঝেমধ্যে চিকিৎসকও আনা হয়। বারবার নাম-জায়গা পরিবর্তন অর্জন নিরাময় কেন্দ্রের : রাজধানীর শনির আখড়া ব্রিজের পাশে ১ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাড়িতে অর্জন মাদক নিরাময় কেন্দ্র নামে একটি অবৈধ প্রতিষ্ঠান আছে বলে খোঁজ পাওয়া যায়। পরে ওই বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স না থাকায় ঘন ঘন জায়গা পরিবর্তন করে। শনির আখড়া থেকে কুতুবখালী এলাকায় নতুন ঠিকানা পেতেছে। পরে কুতুবখালী এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অর্জন নামে একটি নিরাময় কেন্দ্র চালু হলেও মাস খানেকের বেশি টেকেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্জন মাদক নিরাময় কেন্দ্রটি বর্তমানে অবৈধভাবেই নারায়ণগঞ্জের পাগলা এলাকায় চাঁদের আলো নিরাময় কেন্দ্র নামে চলছে। জানা গেছে, খিলক্ষেতে অর্জন মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র নামে একটি অনুমোদন নেয়া প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রশাসনের হাত থেকে বাঁচতে শনির আখড়াতেও ব্যবহার করা হয়েছিল একই নাম।

অবৈধভাবে একযুগ চলার পর সাময়িক বন্ধ ‘নতুন জীবন’ : যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক রোডের ৫/এ নম্বর বাড়ির নিচতলার একটি রুম ও ৫ম তলা ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয় নতুন জীবন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে রোগী সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাড়ির সামনে এখনো রয়েছে সাইনবোর্ড। নিচতলার অফিস কক্ষে তালা দেয়া। তবে দরজায় বড় করে লেখা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত, লাইসেন্স নং- ৮৯৯৫। বাড়ির মালিক আবুল বাশার ভোরের কাগজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক লিটন ও জাহাঙ্গীর নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এক কর্মকর্তার তত্ত¡াবধানে নিরাময় কেন্দ্রটি ১২ বছরের বেশি সময় ধরে চলমান ছিল। করোনাকালে রোগী সংকটে বেশ কয়েক মাসের ভাড়া বকেয়া পড়ায় সম্প্রতি তারা ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছে। চিকিৎসা কীভাবে চলত জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে ডাক্তার আসতে দেখতাম। কিন্তু কীভাবে চিকিৎসা চলত সেটা জানি না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লিটন ও জাহাঙ্গীরসহ ১১ জন মিলে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো একই নামে নিরাময় কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে চক্রটির।

অবৈধ মাদক নিরাময় কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএনসির সহকারী পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) রাহুল সেন ভোরের কাগজকে বলেন, কোনো অবৈধ প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। পাশাপাশি যেগুলোর অনুমোদন দেয়া আছে সেগুলোও নিয়মিত ভিজিট করা হয়। কোনো অনিয়ম পেলে আমরা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।

The post ‘মাদক নিরাময়’ ভয়ংকর! appeared first on Bhorer Kagoj.

0 Comments

There are no comments yet

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × five =

Back to top