স্কুলে সব বই পৌঁছতে লাগবে আরো ১০ দিন

১০ বছর পর ১ জানুয়ারি
সব বই পেল না শিক্ষার্থীরা

দীর্ঘ ১০ বছর পর এসে এই প্রথম পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা হাতে পায়নি বিনামূল্যের সব বই। দেশের কোথাও আংশিক; আবার কোথাও দুএকটা শ্রেণির বই গেছে। বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। আগামী ১৫ জানুয়ারির আগে শিক্ষার্থীরা সব বই হাতে পাবে না বলেও অনুসন্ধানে জানা গেছে। তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীরা পেয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গতিশীল নেতৃত্বের অভাবে এনসিটিবি চলতি বছরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ঠিক সময়ে ছাপাতে পারেনি। অন্যান্য বছর যেখানে অক্টোবরের মধ্যেই পাঠ্যবই ছাপা শেষ হয়ে যায় সেখানে এবার জানুয়ারিতেও ছাপা হচ্ছে। এনসিটিবি অবশ্য বলছে, ২০২০ সালে মহামারি করোনার কারণে এক মাস অফিস বন্ধ থাকায় কোনো কাজ করা যায়নি। ফলে ২০২১ এর পাঠ্যবইও যথাসময়ে দেয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০১০ সাল থেকে ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই দিয়ে আসছে। কিন্তু এ বছর করোনায় উৎসব বাতিল করা হয়েছে। আর ১ জানুয়ারি বই তুলে দিতে পারেনি সরকার। জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বিতরণ নিয়ন্ত্রক মো. জিয়াউল হক ভোরের কাগজকে বলেন, গত ১০ বছরে মহামারি আসেনি; বইও পৌঁছাতে দেরি হয়নি। এবার মহামারি এসেছে, সঙ্গত কারণেই পাঠ্যবইও শিক্ষার্থীদের হাতে দেরি করে যাচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়ার জন্য কাজ করছে এনসিটিবি।

দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা বলেন, বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা বই পেয়ে আসছিল। এজন্য দিনটিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলাদা আনন্দ থাকত। কিন্তু এ বছর প্রথম দিন কোনো শিক্ষার্থীকে বই দেয়া গেছে আবার কোনো শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেয়া সম্ভব হয়নি। যারা পেয়েছে তাদের মধ্যে আনন্দ থাকলেও যারা পায়নি তারা নিরানন্দে বাড়ি ফিরে গেছে।

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, তার স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির একটি বইও আসেনি। অন্য শ্রেণির আংশিক বই এসেছে। যা এসেছে তা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। ওই উপজেলায় প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণির বইও পৌঁছেনি বলে জানা গেছে।

শরীয়তপুরের জাজিরা গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান খান বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির একটি বইও আসেনি। নবম শ্রেণির চারটি এবং সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এসেছে মাত্র ৩টি।

শেরপুরের নকলা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রব বলেন, অষ্টম শ্রেণির একটি বইও আসেনি। অন্য শ্রেণির আংশিক বই এসেছে। এই চিত্র শুধু ওই স্কুলের নয়, পুরো নকলা উপজেলার স্কুলগুলোতেÑ জানালেন এই প্রধান শিক্ষক। ঢাকার গুলশান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা জামান বলেন, নবম শ্রেণির কোনো বই এখনো আসেনি। খিলগাঁও গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, তার স্কুলে আংশিক বই এসেছে।

ঢাকার কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমতউল্লাহ বলেন, বই বিতরণের জন্য একটি নীতিমালা করা দরকার। যার মাধ্যমে নির্ধারিত একটি দিনে সারাদেশে শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের ৮৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের ৫৫ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ হয়েছে। বাকি বই ছাপার কাজ চলমান রয়েছে।

ছাপাখানা মালিকদের দাবি, বই মুদ্রণের কার্যাদেশ দেয়ার পর বাজারে কাগজের মূল্য বেড়ে যাওয়া, করোনা মহামারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজ তৈরির কাঁচামাল ‘পাল্প’র (মন্ড) সংকট এবং কাগজ মিল মালিকরা ছাপাখানার মালিকদের (প্রিন্টার্স) সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী আগের দামে কাগজ সরবরাহ না করার কারণেই বই ছাপার কাজ আটকে ছিল। সেগুলো এখনো ছাপা হচ্ছে।

চলতি ২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক-প্রাথমিকসহ প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা স্তরসহ সবমিলিয়ে প্রায় ৩৬ কোটি পাঠ্যবই ছাপানোর কথা রয়েছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সব বই ছাপা ও সরবরাহ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, সরকার ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির জন্য ব্রেইল বইসহ (৯ হাজার ৫০৪টি) ২৪ কোটি ৪১ লাখ ২২ হাজার ৩৪৯টি পাঠ্যবই বিতরণ করছে। তবে গত ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরের ১৬ কোটি ১১ লাখ আট হাজার ৭০০ কপি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন ছাপাখানার মালিকরা। আর প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের ৬৬ লাখ ৬০০ কপি বই ছাপার বাকি ছিল। প্রাথমিক স্তরের মোট ১০ কোটি ৮৬ লাখ ১৯ হাজার ২২২ কপি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। প্রাথমিকের মোট বইয়ের মধ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য ছাপা হচ্ছে ৬০ রাখ ৩৬ হাজার ৬৬৭ কপি এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য ছাপা হচ্ছে ২ লাখ ১৩ হাজার ২৮৮ কপি বই। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য ছাপানো হচ্ছে ৮৭ হাজার ৭৮৬ কপি খাতা।

The post স্কুলে সব বই পৌঁছতে লাগবে আরো ১০ দিন appeared first on Bhorer Kagoj.

0 Comments

There are no comments yet

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − eleven =

Back to top