বই মনের নিঃসঙ্গতা দূর করে

বই শুধু কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে সীমাবদ্ধ নয়- কোনো জাতিকে সঠিকভাবে গঠনের জন্য একটি উৎকৃষ্ট হাতিয়ার। বই মনের মধ্যে আপন ভুবন সৃষ্টি করে এবং নিঃসঙ্গতা দূর করে। বই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী। বই মনকে পবিত্র করে এবং চারদিকের বিরূপ পরিবেশ থেকে মুক্ত রাখে। ইউনেস্কোর ভাষায়- ‘বই মানুষকে সর্বাধিক আলোকিত করতে পারে।’ আদিকাল থেকেই বই শিক্ষিত সমাজে এক অসামান্য ভূমিকা পালন করে আসছে। জ্ঞানের প্রতি মানুষের যে আগ্রহ এবং অজানাকে জানার যে সাধ, তা মেটানোর জন্য চাই বই। যখন সাধারণ মানুষের পক্ষে জ্ঞানচর্চা সহজ ছিল না, তখনো রাজা কিংবা কোনো ধনী ব্যক্তির প্রচেষ্টায় বই রচনা হতো এবং বই পড়ার জন্য মানুষকে উৎসাহী করা হতো।
বই একটি গর্জনহীন হাতিয়ার, যার কথা আছে কিন্তু কণ্ঠ নেই। মহাপুরুষদের ভাষায়- ‘যে জাতি যত বেশি বই পড়ে, সে জাতি তত বেশি উন্নত এবং তত বেশি সভ্যতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে।’ সূর্যহীন পৃথিবী যেমন অন্ধকার, তেমনি বই ছাড়া জাতির জীবনও অন্ধকার। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ আজ বইয়ের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছে। মানুষ যাতে দেশ ও জাতি গঠনে সহজ-সঠিক দিকনির্দেশনা পায়, সেজন্য প্রচুর বই পড়া প্রয়োজন।
বই সংরক্ষণের জন্য লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। পৃথিবীর বিখ্যাত গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। সেখানে সমগ্র বিশ্বে^র যত মনীষী আছেন, তাদের লেখা বই সংগৃহীত আছে। আর সেই লেখা বিশ্বের প্রতিটি স্থানে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। প্রায় সব দেশেই ছোট-বড় গ্রন্থাগার রয়েছে। এসব গ্রন্থাগারে সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বইয়ের গুণগত মানেরও উন্নতি সাধিত হয়েছে। জ্ঞান সৃষ্টিতে বইয়ের ভূমিকা যেমন অপরিসীম, তেমনি জ্ঞান বিতরণের মাধ্যম হিসেবে গ্রন্থাগারের ভূমিকাও অনেক। যে জাতি তার বইয়ের সমাহার বৃদ্ধি করতে পেরেছে, সে জাতি ততই উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানুষকে শুধু জ্ঞানের রাজ্যের পথ দেখাতে পারে; কিন্তু জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা নিজেকেই করতে হয়। বই আমাদের সহজেই সেই জ্ঞানের রাজ্যে নিয়ে যেতে পারে। বই মানুষের অজ্ঞতা দূর করার জন্য যে কত বেশি উপযোগী, তা বলে শেষ করা যাবে না। তাই হাতে সময় যত স্বল্পই হোক, প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়ার অভ্যাস আমাদের গড়ে তুলতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে চালিত করার মুখ্য উপাদান হলো বই। পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রেও আমরা সহজেই বইকে বেছে নিতে পারি, তা সে যে বয়সেরই হোক না কেন। প্রতিটি প্রজন্মের জন্য বই হোক নিত্যসঙ্গী এবং উৎকৃষ্ট হাতিয়ার।
এখন চলছে প্রাণের মেলা- বইমেলা। পছন্দের বইটি সহজে হাতের কাছে পাওয়ার একটি মোক্ষম উপায় এ বইমেলা। তাই পরিবারকে নিয়ে আজই বেরিয়ে পড়–ন, উপভোগ করুন বইমেলার হৃদয়ছোঁয়া আমেজ। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন- আপনার জ্ঞান অর্জনের জন্য পছন্দের বইটি বেছে নিন। বইকে ভালোবাসুন। নির্ভেজাল এবং সঠিক সঙ্গী হিসেবে বইকে প্রাধান্য দিন।

প্রদীপ সাহা : লেখক, ঢাকা।
pradipsaha509@gmail.com

The post বই মনের নিঃসঙ্গতা দূর করে appeared first on Bhorer Kagoj.

0 Comments

There are no comments yet

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − eight =

Back to top