বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

দেশে বর্তমানে প্রায় ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ভোলা জেলার চর কুকরি-মুকরিতে ডিজিটাল সেন্টার উদ্বোধন করেন, তখন দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৬ লাখ। আর বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর আওতায়। দেশে প্রায় ৫ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী ও ৩ কোটির অধিক ইউটিউব ব্যবহারকারী রয়েছে। যাদের টার্গেট করে দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিনিয়ত নানা অবাস্তব গুজব ছড়িয়ে দেশে অরাজকতা তৈরির পাঁয়তারা করা হচ্ছে। ব্যাংক খাতের গুজব, অর্থনৈতিক অস্থিরতার ভুয়া তথ্য, দেশবিরোধী কনটেন্ট মানুষকে বিভ্রান্ত করার নতুন নতুন ষড়যন্ত্র। স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজপথে পরাজিত হয়ে গুজব সেলের ওপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির বিপরীতে ক্রমাগত মিথ্যা তথ্য ও কনটেন্ট তৈরি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
বাংলাদেশের প্রযুক্তি বাজার, সুবিধাভোগী অংশীজন প্রযুক্তির সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংযোগের একটা সুন্দর সময় পার করছে এখন। বর্তমানে বিশ্বে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাজার প্রায় দেড় ট্রিলিয়ন ডলারেরও অধিক। এ বাজারে কাজ করছে সাড়ে ৬ লাখ বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সার। কর্মী সরবরাহের হিসেবে যা বিশ্বে দ্বিতীয়। ফ্রিল্যান্সারদের মেগা সিটি হিসেবেও ঢাকা বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ অষ্টম। প্রযুক্তির বাজারে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। ফ্রিল্যান্সাররা বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে। তাই ডিজিটাল দুনিয়ায় ডিজিটাল ব্যবস্থার গুরুত্ব যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেমনি নতুন নতুন হুমকিও তৈরি হচ্ছে। ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, অফিসিয়াল নথি, রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্যও সুরক্ষার জন্য নতুন করে সবাইকে ভাবতে হচ্ছে। যার জন্য বাংলাদেশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে। যা বিশ্বের আরো প্রায় ১৫৬টি দেশে বিদ্যমান।
দেশে দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তাকে জোরদার করতে আইনের পরিধিকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে- ইলেক্ট্রনিক লেনদেন আইন, ভোক্তা সুরক্ষা আইন, গোপনীয়তা এবং ডাটা সুরক্ষা আইন, সাইবার ক্রাইম আইন- এ চার ক্যাটাগরিতে এগিয়ে আছে ইউরোপ আর পিছিয়ে আছে আফ্রিকান দেশগুলো। সবদিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশ এখনো ডাটা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করার প্রক্রিয়ায় আছে, যার একটি খসড়ার কথা আমরা জানতে পেরেছি ‘ডাটা সুরক্ষা আইন-২০২২’ নামে, যা এখনো যাচাই-বাছাই চলছে। এ আইনগুলো দেশে দেশে কার্যকর করা হলেও বাংলাদেশে এক শ্রেণির সমালোচক আছেন যারা বাস্তবতা বিবর্জিত সমালোচনা করেন, যা বাংলাদেশের জন্য দরকার তারও সমালোচনা করেন, যা দরকার নেই তারও সমালোচনা করেন।
বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শাস্তি নিয়েও আছে নানা সমালোচনা। বাস্তবতা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিজিটাল অপরাধের শাস্তি কঠোর ও অমার্জনীয়, যার ন্যূনতম শাস্তি ২০ বছর কারাভোগ। ডিজিটাল অপরাধের কারণে যদি কারোর মৃত্যু হয় অপরাধীর শাস্তি আজীবন কারা ভোগ, ইউএসএ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাংলাদেশের থেকেও কঠোর। গার্ডিয়ান পত্রিকার ইউ কে প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী যুক্তরাজ্যে গড়ে ৯ জন আটক হন ডিজিটাল আইনে। কিন্তু বাংলাদেশের কথা বিবেচনা করলে তা এক শতাংশেরও কম হবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে তা যেন সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়, ব্যক্তিগত আক্রোশের হাতিয়ার যেন না হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এবং ডিজিটাল বলয়কে সুরক্ষা ও জনকল্যাণের জন্য।

তানজিব রহমান : লেখক, ঢাকা।
tanzib1971@gmail.com

The post বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন appeared first on Bhorer Kagoj.

0 Comments

There are no comments yet

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − 6 =

Back to top