সরকারের ‘টোপ’ থেকে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ মির্জা ফখরুলের

ক্ষমতাসীনদের অগ্নিসন্ত্রাসের ফাঁদ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিহত করে আন্দোলনের মাধ্যমে জীবনের মূল্যে দিয়ে হলেও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে আজকের দিনের শপথ।

সোমবার (২৯ মে) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলেচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আহ্বায়ক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সহ দলের সিনিয়র নেতারা।

মির্জা ফখরুল বলেন, এতদিন পরেও জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে এতো অপবাদ চক্রান্ত চলছে তাকে ছোট করার। কিন্তু ধ্রুব তীরের মতো সত্য যে, জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্যে দিয়েই দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা হয়েছিল। প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে তিনি জাতির সামনে ত্রাণকর্তার মতো হাজির হয়েছিল। তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান অত্যন্ত বেশি প্রাসঙ্গিক। তার সম্পর্কে পড়তে হবে, জানতে হবে। অন্ধকার থেকে জাতিকে আশার আলোর দিকে নিয়ে গেছেন ।

ফখরুল বলেন, পল্লী বিদুৎ, কৃষি গবেষণা, বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন। সবচেয়ে বড় হলো তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ তুলে এনে জাতিকে স্বাতন্ত্র্য এনে দিয়েছেন। আজ দূর্ভাগ্য হলো- গণতন্ত্রের নেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গৃহবন্দী করে রেখেছেন। আজকে আবার ভিন্ন মোড়কে বাকশাল কায়েম করতে চায়।

সরকারের লাফালাফি আজকে কমে এসেছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকার বলছে আমরা সংঘাত চাই না, আলাপ আলোচানার মধ্যে দিয়ে সমাধান চাই। অথচ কোথায় বাধা নেই, গায়েবি মামলার হিড়িক চলছে! আমরা লড়াই সংগ্রাম করছি, এই সংগ্রাম এখন চূড়ান্ত পর্যায়। এ দেশের মানুষ এখন সরকারকে বিশ্বাস করে না, তাদের ক্ষমতায় রেখে ভোট হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। সংলাপ আলোচনা নয়, আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই সরকারের পরিবর্তন চাই।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হেসেন বলেন, জিয়াউর রহমান, সৈনিক, রাষ্ট্রনায়ক ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সফল ছিলেন। সিপাহী বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি দেশের পূর্ণাঙ্গ জাতিসত্তার মৌলিক পবিবতন করে গেছেন। মুক্তবাজার অর্থনীতিকে মুক্ত করে দিয়ে দেশের উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন করেছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতীয়তাবাদী দল ছিলো না, তখন আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েম করেছিল, আর জিয়াউর রহমান সুযোগ বুঝে বাকশাল বাতিল করে জনকল্যাণে বহুদলীয় রাষ্ট্র কায়েক করে গিয়েছিলেন। একারণে আজ যারা ক্ষমতায় তারা হীনমন্যতায় ভুগে জনগণকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

সোমবার রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ছবি: ভোরের কাগজ

নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যারা বিএনপি নেতাকর্মী তাদের লজ্জিত হওয়ার মতো কোনো ইতিহাস নেই, তবে গর্ব করার মতো অনেক কারণ আছে। আমাদের কেউ গণতন্ত্র হত্যাকারীদের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমরাই গণতন্ত্রে প্রতিষ্ঠা ও লালনকারী দল। খালেদা জিয়ার শাসন আমলে দেশকে বলা হতো ‘উদীয়মান বাঘ’ অথচ আজ শেষ করে দেয়া হচ্ছে সেই দেশটাকে।

তিনি বলেন, আজকে কিছু অকৃতজ্ঞ মানুষ জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কুৎসা রটায়। কিন্তু দেশের মানুষ সেই ইতিহাস জানেন জিয়াউর রহমান কিভাবে সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছেন।  আজ মানুষ নয়, স্বার্থবাদীরা জিয়াউর রহমানকে ভুলে গেছেন। তিনি বলেন, আজ দেশের মানুষ নীপীড়িত। সরকারের কিছু মানুষ বিত্তবান হয়েছে। এবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারে হঁটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের বড় প্রমাণ।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে গণতন্ত্রের মূলভিত্তি তৈরি করে গেছেন জিয়াউর রহমান, পরে খালেদা জিয়া সেটা বাস্তবায়ন করেছেন। সারা বিশ্বের জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে যে কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা সমাধানের মধ্যে দিয়ে শান্তির নজির স্হাপন করে গেছেন। এমনকি পররাষ্ট্র নীতির মাধ্যমে তিনি দেশকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন।

তিনি বলেন, আজকের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, সমস্ত গণতন্ত্রিক ও সাংবিধানিক সব অধিকার কেড়ে নেয়ায় বিশ্বের কাছে অত্যন্ত ছোট হয়েছে। একটা নীতিমালা থাকার পরেও বাংলাদেশের জন্য কেন আলাদা ভিসানীতি প্রয়োগ করা হলো? এটাই এখন বড় প্রশ্ন। বিএনপি বারবার বলে আসছে নির্বাচনের স্বার্থে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে। এ কারণেই ভিসানাীতি দেয়া হয়েছে। এই তৃতীয় চপেটাঘাত খাওয়ার পরে সরকারি দলের নেতারা বলছে আমরা একমত, তারমানে তারা বলতে চাইছে আমরা আর চুরি করবো না। তবে ওই খেলায় বিএনপি আর নেই। ভোট ডাকাতকে বাড়ি পাহারা দেয়ার জন্য রাজি হবে না। আমরাও ভোটচোরদের তালিকা করবো। আপনারা ছবি তুলবেন, ফেসবুকে পোস্ট দিবেন, বিএনপি অফিসে পাঠাবেন, বাকিটা এমনি হয়ে যাবে। তারমানে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করেই তাতে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হবে।

সেলিমা রহমান বলেন, জিয়াউর রমানের বিশ্বনেতা হিবেসে পরিচয় পেয়েছেন। আজ দানব সরকার আবার বাকশাল কায়েম করতে চাইছে। দেশে দুর্ভিক্ষ হানা দিয়েছে অথচ ব্যাংকের টাকা দেশের বাইরে পাচার করে দিচ্ছে সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা। তাই জনগণের মুক্তির জন্য আমরা ভোটাধিকার ফেরত চাই। সরকার পতন আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায়ে আমরা একদফা আন্দোলন নিয়ে রাজপথে সরব হবো।

The post সরকারের ‘টোপ’ থেকে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ মির্জা ফখরুলের appeared first on Bhorer Kagoj.

0 Comments

There are no comments yet

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen + 4 =

Back to top