ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন (২০০৯)

ভোক্তার অধিকার কী কী ?
জাতিসংঘ স্বীকৃত ভোক্তা অধিকার ৮টি। যথাঃ
১ মৌলিক চাহিদা পুরনের অধিকার (সংবিধানে বিধৃত)
২ তথ্য পাওয়ার অধিকার (তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯
এ বিধৃত)
৩ নিরাপদ পন্য ও সেবা পাওয়ার অধিকার।
৪ পছন্দের অধিকার।
৫ জানার অধিকার।
৬ অভিযোগ প্রতিকার পাওয়ার অধিকার।
৭ ভোক্তা অধিকার দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা লাভের অধিকার।
৮ সুস্থ পরিবেশের অধিকার।

 

আইনের উদ্দেশ্যঃ
১। ভোক্তা অধিকার আইন সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা।
২। ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ করা।
৩। ভোক্তা অধিকার লঙ্গন জনিত অভিযোগ নিস্পত্তি করা।
৪। নিরাপদ পন্য বা সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা।
৫। পন্য বা সেবা ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্থ ভোক্তাকে ক্ষতিপুরনের
ব্যবস্থা।
৬। পন্য বা সেবাক্রয়ে প্রতারণা প্রতিরোধ।
৭। ভোক্তা অধিকার দায়িত্ব সম্পর্কে গনসচেতনতা সৃষ্টি করা।

আইনটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ঃ
১। বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
২। প্রত্যেক জেলার জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত এক্সিকিউিটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট।

ভোক্তা কে ?
নিন্মোক্ত ব্যাক্তিগন ভোক্তাঃ
বানিজ্যিক উদ্দেশ্য ব্যতিত-যিনি
১। সম্পুর্ন মূল্য পরিশোধ করে বা বাকিতে বা আংশিক বাকিতে পন্য বা সেবা ক্রয় করেন।
২। কিস্তিতে পন্য বা সেবা ক্রয় করেন।
৩। যিনি বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে পন্য ক্রয় করে বিক্রয় করেন।

ভোক্তার দায়িত্বঃ
১। ভোক্তার অধিকার দায়িত্ব সম্পর্কে জানা।
২। ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণের সুফল সম্পর্কে জানা।
৩। ভোক্তার অধিকার বিরোধী কার্যের সুফল সম্পর্কে জানা।
৪। পণ্য বা সেবা গ্রহনের সময় যাচাই বাছাই করে সঠিক
পন্য, মান, মূল্য ও উপযুক্ততা যাচাই করে কেনা।
৫। ভোক্তা অধিকার বাস্তবায়নে সংগঠিত ও সোচ্চার হওয়া।
৬। অভিযোগ দায়ের করা।

বিক্রেতা কে ?
১। উৎপাদন কারী বা প্রস্তুতকারী
২। সরবরাহকারী
৩। পাইকারী বিক্রেতা
৪। খুচরা বিক্রেতা।

কে অভিযোগকারী হতে পারেনঃ
১। যে কোন ভোক্তা নিজে।
২। একই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এক বা একাধিক ব্যক্তি।
৩। জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ পরিষদ বা তার পক্ষে অভিযোগ দায়েরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা।
৪। সরকার বা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কোন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
৫। পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ী অর্থাৎ তিনি যখন ভোক্তা  হিসেবে কোন পণ্য ব্যবহার করবেন।
৮। জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশন বা এর পক্ষে অভিযোগ দায়েরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা।

ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তা কোথায় ও কিভাবে অভিযোগ দায়ের করবেন ?
১। মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর ১, কাওরান বাজার (টিসিবি ভবন, ৮ম তলা), ঢাকা।
২। প্রত্যেক জেলার জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট।

ফৌজদারী প্রতিকারের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তা তার নিজ  জেলায় প্রথম শ্রেণীর একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে বা এ ব্যাপারে নিযুক্ত কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করে প্রতিকার চাইতে পারেন। অভিযোগে তিনি কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ও কী প্রতিকার চান তার সুষ্পষ্ট বিবরন থাকতে হবে। দেওয়ানী প্রতিকারের ক্ষেত্রে ভোক্তা যুগ্ন জেলা জজের আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন।
অভিযোগ দায়েরের সময় সীমাঃ
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ঘটনার তারিখ থেকে ত্রিশ (৩০) দিনের মধ্যে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। উক্ত সময় সীমা অতিক্রম করলে অভিযোগটি তামাদি বলে গণ্য হবে।
অভিযোগ প্রদানের নিয়ম

১। অভিযোগকারী তার লিখিত অভিযোগে তার নাম, পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা মোবাইল নং, যদি সম্ভব হয় ই-মেইল ও যোগাযোগের  সহজ মাধ্যম উল্লেখ করবেন। অভিযোগের সাথে ক্রয়কৃত মালের  মেমো বা রশিদ সংযুক্ত করতে হবে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার  পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা ফোন, ই-মেইল যদি সম্ভব হয় উল্লেখ করতে  হবে।
২। ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েবসাইট ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক্স মাধ্যমে। ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্য ও অপরাধ এবং দন্ডঃ

(ক) ম্যাজিষ্ট্রেট ভোক্তার অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে অনধিক ১ বছর কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দিতে পারেন।
১। পন্যের মোড়ক ব্যবহার না করা বা মোড়কের গাঁয়ে খুচরা বিক্রয় মূল্য, মেয়াদ উর্ত্তীনের তারিখ, ইত্যাদি লেখা না থাকা।
২। পন্য বা সেবার মূল্য তালিকা সংরক্ষণ ও টাঙ্গিয়ে এর প্রদর্শন না করা।
৩। নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্যে কোন পন্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করা।
৪। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক পন্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করা।
৫। ওজনে, বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি করা।
৬। পরিমাপ, দৈর্ঘ্য পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছুতে কারচুপি করা।
৭। মেয়াদ উত্তীর্ন পন্য বা ঔষধ বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করা।

(খ) অনধিক ১ বছর কারাদন্ড বা অনধিক ২ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডযোগ্য অপরাধ।
১। মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতাকে প্রতারিত করা।

(গ) অনধিক ২ বছর কারাদন্ড বা অনধিক ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডযোগ্য অপরাধঃ
১। অবৈধ প্রক্রিয়ায় পন্য উৎপাদণ বা প্রক্রিয়াজাতকরন করা।

(ঘ) অনধিক ৩ বছর কারাদন্ড বা অনধিক ২ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডযোগ্য অপরাধঃ
১। জেনে শুনে ভেজাল মিশ্রিত পন্য বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করা।
২। খাদ্য পন্যে ক্ষতিকর নিষিদ্ধ দ্রব্য মিশ্রিত ও বিক্রয় করা।
৩। পন্যের নকল প্রস্তুত বা উৎপাদন করা।
৪। সেবা গ্রহিতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কার্য করা।
৫। অবহেলা,দায়িত্বহীনতা দ্বারা সেবাগ্রহিতার অর্থ বা স্বাস্থ্যহানি ইত্যাদি ঘটানো।

(ঙ) অপরাধ পুনঃ সংঘটনের দন্ডঃ
উক্ত অপরাধ সমুহে দন্ডিত ব্যক্তি পুনরায় একই অপরাধ করলে তিনি সর্বোচ্চ দন্ডের দ্বিগুন দন্ডে দন্ডিত হবেন।
বিঃ দ্রঃ উক্ত দন্ড ১ম শ্রেনীর জুডিশিয়াল বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট কতৃক প্রদেয়। বিশেষ ট্রাইবুনালে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড হতে পারে।

অভিযোগে ফৌজদারী প্রতিকারঃ
১। ভোক্তা অধিকার বিরোধী অপরাধ সমুহ প্রথম শ্রেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কিংবা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য।
২। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর উচ্চতর শাস্তি বিধান কল্পে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে পারবে।
৩। অভিযোগকারী ফৌজদারী মামলা সরাসরি দায়ের করতে পারবেন না।
৪। অভিযোগ দায়ের হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ফৌজদারী মামলা দায়েরের লক্ষ্যে অভিযোগপত্র ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত বা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে হবে।
৫। বিচারে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড প্রদানসহ মালামাল বাজেয়াপ্ত করতে পারেন।
৬। অভিযোগকারী জরিমানার ২৫ শতাংশ তাৎক্ষণনিক ভাবে প্রাপ্য হবেন।

দেওয়ানি প্রতিকার

কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যক্রমসূচিত হওয়ার কিংবা ঐ ব্যক্তি অনুরুপ কার্যের জন্য ফৌজদারী অপরাধে দন্ডিত হওয়ার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ কোন ভোক্তা ঐ ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আর্থিক মূল্যে নিরুপন যোগ্য ও নিরুপিত ক্ষতির পাচঁগুন পরিমান আর্থিক ক্ষতিপুরন দাবি করে স্থানীয় অধিক্ষেত্রের যুগ্ন জেলা জজের আদালতে দেওয়ানি মামলা দায়ের করতে পারবেন।

প্রশাসনিক প্রতিকারঃ
১। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার ক্ষমতা প্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা সমীচিন মনে, করলে ফৌজদারী মামলা দায়েরের পরিবর্তে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় শুধু জরিমানা আরোপ, ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল বা  ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাময়িক বা স্থায়ীভাবে স্থগিত করতে পারবেন।
২। প্রশাসনিক ব্যবস্থায় আরোপিত বা আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারি তাৎক্ষনিকভাবে প্রাপ্য হবেন।

ফৌজদারি আপিলঃ

ক্ষুদ্ধ পক্ষ আদেশ প্রদানের ৬০ দিনের মধ্যে স্থানীয় অধিক্ষেত্রের সেশন জজের আদালতে আপিল দায়ের  করতে পারবেন।

দেওয়ানি আপিলঃ

যুগ্ন জেলা জজের আদালতে রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে কেবল হাই কোর্ট বিভাগে আপিল দায়ের করা যাবে।

রিট পিটিশনঃ
প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা যাবে।

Back to top