নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ (২০১৩ সনের ৪৩ নং আইন) – প্রথম অংশ

প্রকাশকাল:-১০ অক্টোবর-২০১৩

বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং তদ্লক্ষ্যে একটি দক্ষ ও কার্যকর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এতদ্সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন রহিতক্রমে উহা পুনঃপ্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন।

যেহেতু মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা আবশ্যক; এবং যেহেতু বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং তদ্লক্ষ্যে একটি দক্ষ ও কার্যকর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এতদ্সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন রহিতক্রমে উহা পুনঃপ্রণয়নের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল-

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তনঃ-

১। (১) এই আইন নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ নামে অভিহিত হইবে।
(২) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে তারিখ নির্ধারণ করিবে, সেই তারিখে ইহা কার্যকর হইবে।
*এস, আর, ও নং ১৫-আইন/২০১৫, তারিখঃ জানুয়ারি ২৬, ২০১৫ ইং দ্বারা সরকার ১৯ মাঘ, ১৪২১ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ তারিখ উক্ত আইন কার্যকর হইয়াছে।
সংজ্ঞাঃ- ২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকিলে, এই আইনে-
(১) ‘‘কর্তৃপক্ষ’’ অর্থ ধারা ৫ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ;
(২) ‘‘কীটনাশক বা বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ’’ অর্থ উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিক্রয় বা বিপণনের যে কোন পর্যায়ে, কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে, খাদ্য বস্তুতে উপস্থিত কোন বিশেষ বস্তু বা উদ্ভুত কোন অবস্থা, যাহাতে কীটনাশক বা বালাইনাশকের মূল উপাদান, সহযোগী অংশ, রূপান্তরিত উৎপন্ন দ্রব্য, বিপাক বা শোষণকৃত (সবঃধনড়ষরঃবং) অবশিষ্টাংশ, বিক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত বস্তু বা সৃষ্ট দূষিত বস্তুসহ এইরূপ কোন বস্তু বিদ্যমান থাকে ও যাহাদের উপস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্যে মারাত্মক বিষক্রিয়া সংঘটিত হয় বলিয়া বিবেচিত হয়; এবং কোন খাদ্যদ্রব্যে পরিবেশ হইতে সংক্রামিত অবশিষ্টাংশও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে; এবং

(৩) ‘‘খাদ্য’’ অর্থ চর্ব্য, চূষ্য, লেহ্য (যেমন-খাদ্যশস্য, ডাল, মৎস্য, মাংস, দুগ্ধ, ডিম, ভোজ্য-তৈল, ফলমূল, শাকসব্জি, ইত্যাদি) বা পেয় (যেমন- সাধারণ পানি, বায়ুবায়িত পানি, অঙ্গারায়িত পানি, এনার্জি-ড্রিংক, ইত্যাদি)-সহ সকল প্রকার প্রক্রিয়াজাত, আংশিক-প্রক্রিয়াজাত বা অপ্রক্রিয়াজাত আহার্য উৎপাদন এবং খাদ্য, প্রক্রিয়াকরণ বা প্রস্তুতকরণে ব্যবহৃত উপকরণ বা কাঁচামালও, যাহা মানবদেহের জন্য উপকারী আহার্য হিসাবে জীবন ধারণ, পুষ্টি সাধন ও স্বাস্থ্য-রক্ষা করিতে ব্যবহৃত হইয়া থাকে, উহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
ব্যাখ্যা-
(ক) আহার্য প্রস্তুতকরণে ব্যবহৃত রঞ্জক, সুগন্ধি, মশলা, সংযোজন-দ্রব্য, সংরক্ষণ-দ্রব্য, এন্টি-অক্সিডেন্ট, যাহা মূল আহার্য নহে কিন্তু খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ বা প্রস্তুতকরণে ব্যবহৃত হইয়া থাকে, খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(খ) সরকার কর্তৃক, সময় সময়, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা খাদ্য বলিয়া ঘোষিত দ্রব্যাদি, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত হইবে; তবে ঔষধ, ভেষজ, মাদক ও সৌন্দর্য সামগ্রী, ইত্যাদি খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত হইবে না।

(৪) ‘‘খাদ্য আদালত’’ অর্থ ধারা ৬৪ এর অধীন নির্ধারিত বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত;
(৫) ‘‘খাদ্য উৎপাদন’’ অর্থ যে কোন খাদ্যের উপাদানকে খাদ্যদ্রব্যে পরিবর্তন করিবার প্রক্রিয়া, যাহার সহিত অন্যান্য প্রক্রিয়াও অঙ্গীভূত থাকিতে পারে;
(৬) ‘‘খাদ্য পরীক্ষাগার’’ অর্থ কোন আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত বা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত কোন খাদ্য পরীক্ষাগার বা প্রতিষ্ঠান, যে নামেই অভিহিত হউক না কেন;
(৭) ‘‘খাদ্য বিশ্লেষক’’ অর্থ ধারা ৪৫ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন নিযুক্ত কোন খাদ্য বিশ্লেষক এবং উপ-ধারা (২) এর অধীন খাদ্য বিশ্লেষকের দায়িত্বপালনকারী ব্যক্তিও উহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(৮) ‘‘খাদ্য ব্যবসা’’ অর্থ খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং, গুদামজাতকরণ, পরিবহন, আমদানি, বিতরণ বা বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ড এবং মজুদ, যোগান, সরবরাহ ও সেবাসহ খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকরণ অথবা খাদ্যের উপাদান বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(৯) ‘‘খাদ্য ব্যবসায়ী’’ অর্থ যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আপাততঃ বলবৎ কোন আইনের অধীন বা প্রবিধান অনুযায়ী খাদ্য ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং যিনি উক্ত ব্যবসার প্রতি দায়িত্বশীল বা উক্ত ব্যবসার সত্ত্বাধিকারী;
(১০) ‘‘খাদ্য সংযোজন দ্রব্য’’ অর্থ বিশেষ উদ্দেশ্যে খাদ্যের সহিত প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত মাত্রার সংযোজিত যে কোন বস্তু, যাহা সাধারণত মূল আহার্য হিসাবে ভক্ষণ করা হয় না, তবে বৈশিষ্ট্যসূচক উপাদান হিসাবে কারিগরী প্রয়োজনে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, প্রস্তুতকরণ, মোড়কজাতকরণ, সংরক্ষণের মাধ্যমে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, প্রত্যাশিত উপযোগিতা প্রাপ্তির জন্য খাদ্যে ব্যবহৃত হয় এবং দূষক বা অন্য কোন মিশ্রিত পদার্থের অন্তর্ভুক্তি ব্যতিরেকেই খাদ্যের গুণগত মান অক্ষুন্ন রাখিবার জন্য মূল খাদ্যের বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে;

Next: নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ (২০১৩ সনের ৪৩ নং আইন) – দ্বিতীয় অংশ
Back to top